নোটিশ:
Welcome To Our Website...
ব্রেকিং নিউজ :
সুনামগঞ্জ জগন্নাথপুর পৌরসভা ৫ও৬নং ওয়ার্ড বিএনপি এর আলোচোনা ও কর্মীসভা রংপুর ধাপ হাজীপাড়া মোরে একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু দুইমাস পর রহস্য উদঘাটন, বালিশচাপায় স্ত্রীকে হত্যা করেন স্বামী কালিগঞ্জ ছাত্রদলের উদ্যোগে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে ফ্রেস পানি,খাওয়ার স্যালাইন,কলম বিতরণ চাঁদাবাজের দখলদারি মসজিদের জমি মসজিদ কমিটিকে হুমকি রংপুরে মধ্যরাতে মাইক্রোবাস বিস্ফোরিত হয়ে দুটি মাইক্রোবাস পুড়ে ছাই আখাউড়া জুয়েলারি দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৮টি দোকানকে ১১ হাজার টাকা জরিমানা ঝিনাইগাতী সীমান্তে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মদসহ দুটি গরু জব্দ ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শন এবং উন্নয়ন প্রকল্প কাজের আলোচনা কক্সবাজারের মহেশখালী বাসীর স্বপ্নের সী ট্রাক উদ্বোধন

ইতালির যে শহরে ক্রিকেট নিষিদ্ধ

  • আপডেট সময় শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৫০ বার পঠিত

ইতালির আড্রিয়াটিক উপকূলে প্রখর রোদে বাংলাদেশের একদল বন্ধু কংক্রিটের উপর ক্রিকেট অনুশীলন করছিলেন। তারা ট্রিয়েস্ট বিমানবন্দরের কাছে মনফালকোনের উপকণ্ঠে খেলছিলেন। কারণ, তাদের নিজ শহরের মেয়র ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

তারা জানান, শহরের ভেতরে খেললে পুলিশ খেলা থামিয়ে দিত এবং ১০০ ইউরো (৮৪ পাউন্ড) জরিমানা করত। বিবিসি-কে দলের অধিনায়ক মিয়া বাপ্পি বলেন, “যদি আমরা মনফালকোনের ভিতরে খেলতাম তাহলে পুলিশ এতক্ষণে আমাদের থামাতে চলে আসত।”

তিনি এক দল বাঙালি তরুণের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, তারা ওই স্থানীয় পার্কে ক্রিকেট খেলার সময় পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। খেলা চলাকালীন সিসি ক্যামেরায় তাদের খেলতে দেখে পুলিশ তাদের খেলা বন্ধ করে দিয়ে জরিমানা করে।

বাপ্পি অনেকটা অনুযোগের সুরে বলেন, তারা বলে ক্রিকেট ইতালির জন্য না। কিন্তু সত্যটা হল, মূলত আমরা বিদেশি। তাই আমাদের খেলা নিষিদ্ধ করেছে তারা।

বর্তমানে মনফালকোনে গভীর উত্তেজনা বিরাজ করছে, ক্রিকেটের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা তারই প্রতিফলন। মনফালকোনের জনসংখ্যা ৩০,০০০ এর কিছু বেশি। এর মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ বিদেশি। তার মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশি মুসলিম। তারা ১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে বিশাল ক্রুজ-শিপ নির্মাণের জন্য ইতালিতে পাড়ি জমায়।

এরপর কট্টর ডানপন্থি লীগ পার্টির সদস্য মেয়র আনা মারিয়া চিসিন্ট মনে করেন, এই বিদেশিদের কারণে শহরের সাংস্কৃতিক সত্তা বিপদগ্রস্ত। তিনি অভিবাসনবিরোধী মনোভাব নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন এবং তার শহরকে রক্ষা করাসহ খ্রিস্টান মূল্যবোধ রক্ষার মিশনে নেমেছেন।

মনফালকোনে পশ্চিমা পোশাক পরা ইতালীয়রা বাংলাদেশের সালোয়ার-কামিজ এবং হিজাব পরা মানুষের সাথে মেশে। এখানে বাংলাদেশি রেস্তোঁরা রয়েছে।

মেয়র হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা চিসিন্ট শহরের কেন্দ্রীয় স্কয়ারে যেখানে বাংলাদেশিরা সময় কাটাতো সেখান থেকে বেঞ্চগুলো সরিয়ে দিয়েছেন। এমনকি তিনি মুসলিম নারীদের সমুদ্রম সৈকতে কি পরা উচিত তা নিয়েও তর্ক করেছেন।

চিসিন্ট বলেন, “এখানে খুবই শক্তিশালী ইসলামী মৌলবাদী প্রক্রিয়া চলমান। এটি এমন এক সংস্কৃতি যেখানে নারীরা খুব বাজেভাবে পুরুষদের কাছে নিপীড়িত হয়।”

ক্রিকেট নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ এলে মেয়র দাবি করেন, নতুন পিচ তৈরির জন্য জায়গা বা অর্থ নেই।

তিনি বিবিসি-কে বলেন, বাংলাদেশিদের তাদের খেলাটি খেলতে দেয়া হবে না। তারা এই শহরকে, আমাদের সমাজকে কিছুই দেয়নি।”

তিনি বলেন, তারা মনফালকোনের বাইরে, অন্য যেকোনো জায়গায় গিয়ে ক্রিকেট খেলতে পারে।

বিবিসি জানায়, মুসলিম সম্পর্কে মেয়রের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে মৃত্যু হুমকি দেওয়া হয়েছে। সে কারণেই তিনি এখন ২৪ ঘন্টা পুলিশি নিরাপত্তায় রয়েছেন।

মিয়া বাপ্পী এবং তার সতীর্থ ক্রিকেটাররা ফিনক্যান্টিয়েরি শিপইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণের জন্য ইতালিতে কাজ করেন। এটি ইউরোপের বৃহত্তম এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শিপইয়ার্ড।

মেয়র কোম্পানির বিরুদ্ধে “বেতন কম দেওয়ার” অভিযোগ করেছেন । এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে বিদেশি কর্মীদের কম বেতন দেওয়া হয়, যা বাজারের স্বাভাবিক বেতনের তুলনায় অনেক কম।

মেয়রের দাবি, কোম্পানির দেওয়া বেতন এতটাই কম যে, কোনও ইতালীয় নাগরিক এ বেতনে কাজ করতে চাইবে না।

কিন্তু শিপইয়ার্ডের পরিচালক ক্রিস্টিয়ানো বাজারা দৃঢ়ভাবে বলেছেন, কোম্পানি এবং এর ঠিকাদারদের দেওয়া বেতন ইতালীয় আইন অনুযায়ী নির্ধারিত।

বাজারা বিবিসি-কে বলেন, “আমরা প্রশিক্ষিত কর্মী খুঁজে পাচ্ছি না। ইউরোপে, শিপইয়ার্ডে কাজ করার জন্য তরুণদের খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন।”

ইতালির জন্মহার ইউরোপের মধ্যে কম। গত বছর ইতালিতে মাত্র ৩ লাখ ৭৯ হাজার শিশু জন্মেছে। প্রতি নারীর গড় সন্তান সংখ্যা ১ দশমিক ২।

ইতালির শ্রমিকেরা অভাবে আছে। গবেষকরা অনুমান করছেন, ২০৫০ সাল পর্যন্ত ইতালির কর্মী সংকট পূরণের জন্য বছরে ২ লাখ ৮০ হাজার বিদেশি শ্রমিক প্রয়োজন হবে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আগে অভিবাসন কমানোর কথা বলে থাকলেও এখন তিনি বিদেশি কর্মীদের জন্য ভিসার সংখ্যা বৃদ্ধি করছেন।

তবে মনফালকোনের মেয়র আনা মারিয়া চিসিন্ট মনে করেন, বাংলাদেশি মুসলিম সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার সঙ্গে স্থানীয় ইতালীয়দের কোনও মিল নেই।

শহরের দুটি মসজিদের দলগত নামাজ নিষিদ্ধ করলে মনফালকোনে উত্তেজনা বেড়ে যায়। তিনি বলেন, এক ভবনে ১ হাজার ৯০০ জন পর্যন্ত মানুষ প্রার্থনা করেন।

সড়কে একসঙ্গে অনেক গাড়ি পার্কিং এর ফলে যানযটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মাঝরাতে উচ্চস্বরে আজান দেওয়ার কারণে স্থানীয় ইতালিয়রা মেয়রের কাছে অভিযোগ করেন।

যেহেতু ইতালিতে সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ১৩টি ধর্মের মধ্যে ইসলাম নেই। তাই আলাদা করে মসজিদ নির্মাণ বেশ কঠিন।

মনফালকোনের বাংলাদেশিরা মনে করেন, মেয়রের সিদ্ধান্ত তাদের সম্প্রদায়ের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশি প্রবাসী ১৯ বছর বয়সী মেহেলি বলেন, “মেয়র মনে করেন বাংলাদেশিরা ইতালিকে “ইসলামিক দেশ” করতে চায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশি হওয়ার কারণে রাস্তায় তাদেরকে গালিগালাজ ও হয়রানি সহ্য করতে হচ্ছে।

বাপ্পি এই বছর তার ইতালীয় পাসপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু তিনি মনফালকোনে থাকবেন কিনা সেটা অনিশ্চিত।

তিনি বলেন, “আমরা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করি না। আমরা কর দিই। কিন্তু তারা আমাদের এখানে চাইছে না।”

মেয়র মনে করেন, বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা দেশীয় ইতালীয়দের সঙ্গে মানানসই নয়।

বাপ্পি যুক্তি দেন, তারা যদি সবাই চলে যায় তাহলে শিপইয়ার্ডে শ্রমিক কমে যাবে, একটি জাহাজ বানাতে পাঁচ বছর লেগে যাবে।

তবে একটি আঞ্চলিক আদালত দুইটি মসজিদ তৈরির পক্ষে রায় দিয়েছে এবং মেয়রের করা সমবেত প্রার্থনা নিষিদ্ধ করার আদেশ বাতিল করেছে।

তবুও মেয়র তার “ইউরোপের ইসলামীকরণ” বিরোধী অভিযান চালিয়ে যাবেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2024 দৈনিক দেশ প্রতিদিন
Design & Development By HosterCube Ltd.