স্টাফ রিপোর্টার শামীম জামান রাজিবপুর কুড়িগ্রাম:_নিয়মনীতি না মেনে নিয়মিত রাজিবপুরের সমেল মোড়ে পোড়ানো হচ্ছে প্লাস্টিক, উৎপন্ন হচ্ছে কালো ধোঁয়া ,প্লাস্টিক পুড়লে যে কালো ধোঁয়া উৎপন্ন হয়, তা অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এই ধোঁয়ায় থাকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক, যার মধ্যে অন্যতম হলো ডাইঅক্সিন ও ফিউরান। এগুলো বায়ু দূষণ ঘটায় এবং মানুষের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। প্লাস্টিকের ধোঁয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, ক্যান্সার, এবং স্নায়বিক সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া এটি পরিবেশের জন্যও বিপজ্জনক, কারণ এটি গাছপালা ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।প্লাস্টিক পোড়ানো বন্ধ করা এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণের ব্যবহার পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।প্লাস্টিকের কালো ধোঁয়া এড়ানোর জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:—প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার: ব্যবহৃত প্লাস্টিক পুড়িয়ে না ফেলে পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। রিসাইক্লিং প্ল্যান্টের মাধ্যমে প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহারযোগ্য উপকরণে রূপান্তর করা যায়, যা পরিবেশ দূষণ রোধ করে।বিকল্প পদ্ধতিতে বর্জ্য নিষ্পত্তি: বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নত প্রযুক্তি যেমন ইনসিনারেশন প্ল্যান্ট (যেখানে প্লাস্টিক বিশেষ উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে ধোঁয়া ফিল্টার করা হয়) ব্যবহার করতে হবে।জৈব প্লাস্টিকের ব্যবহার: বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যবহার করলে তা সহজেই প্রাকৃতিকভাবে পচে যায়, যার ফলে পোড়ানোর প্রয়োজন হয় না এবং ধোঁয়া উৎপন্ন হয় না।জনসচেতনতা বৃদ্ধি: প্লাস্টিক পোড়ানোর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন, যাতে তারা নিজেদের পর্যায়ে প্লাস্টিক পোড়ানো থেকে বিরত থাকে।কঠোর আইন ও নিয়মাবলী: সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উচিত প্লাস্টিক পোড়ানো নিষিদ্ধ করা এবং এটি প্রতিরোধে যথাযথ আইন প্রয়োগ করা।সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: শহর এবং গ্রামে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে যাতে প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্য নিরাপদ উপায়ে নিষ্পত্তি করা যায়।এভাবে প্লাস্টিক পোড়ানো থেকে সৃষ্ট কালো ধোঁয়ার ক্ষতিকর প্রভাব এড়িয়ে পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকার বয়ে আনা সম্ভব।বাংলাদেশে প্লাস্টিক পোড়ানো এবং এর কালো ধোঁয়া রোধে বেশ কিছু আইন ও নিয়মাবলী বিদ্যমান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:—-পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (Bangladesh Environment Conservation Act, 1995): এই আইনের অধীনে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর বিধান রয়েছে। প্লাস্টিক পোড়ানোর মাধ্যমে বায়ু দূষণ হলে এটি আইনের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হয়, এবং এর জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই আইন অনুসারে ক্ষতিকর বর্জ্য পোড়ানো নিষিদ্ধ, যার মধ্যে প্লাস্টিকও অন্তর্ভুক্ত।বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৫ (Air Pollution Control Rules, 2005): এই বিধিমালার আওতায় বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, যেসব শিল্প ও প্রতিষ্ঠান বায়ু দূষণ ঘটাতে পারে, তাদের জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড মেনে চলতে হবে। প্লাস্টিক পোড়ানোর মাধ্যমে বায়ু দূষণ সৃষ্টির জন্য জরিমানা এবং শাস্তি আরোপ করা হতে পারে।প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: বাংলাদেশ সরকার প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যেমন পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রচার এবং প্লাস্টিক নিষিদ্ধকরণের উদ্যোগ। বিশেষ করে, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার জন্য আইন তৈরির কথা চলছে।স্থানীয় সরকার আইন: বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইন রয়েছে, যেখানে প্লাস্টিক এবং অন্যান্য কঠিন বর্জ্য পোড়ানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তদারকি করে থাকে।শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের জন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও শাস্তি দেওয়া হয়। বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে যেমন প্লাস্টিক পোড়ানো, তার জন্য আর্থিক জরিমানাসহ কারাদণ্ডের বিধানও রয়েছে।এছাড়া, সরকার বিভিন্ন পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার এবং সঠিক নিষ্পত্তি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিচ্ছে।