স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা (হেলাল উদ্দীন)
চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় পুলিশের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বিল্লাল হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে সাবেক এমপি ও পুলিশ সুপারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
সোমবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে বিল্লাল হোসেনের বোন শালপোনা পারভীন (৪০) বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
দর্শনা আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রিপন আলী বাদীর বক্তব্য গ্রহণ শেষে মামলাটি আমলে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সিআইডিকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগর টগর ও সাবেক পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরি। দর্শনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর জয়নুল আবেদিন নফর (৪৭), তৎকালীন দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান মিজান (৫২), দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী মনসুর বাবু (৫৫), দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আলীহিম (৫৫), দামুড়হুদা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব (৫৮), কনস্টেবল সাজিদুর রহমান (৪০) ও এএসআই দেবাশীষ (৪০)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৩ সালে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুরের গ্রামের বিল্লাল হোসেনের (৪৫) কাছে দলীয় দাপটে আলী আজগার টগর, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন নফর, আলী মনসুর বাবু ও আলীহিম পুলিশের ক্রসফায়ারে ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবি করেন। বিল্লাল হোসেন চাঁদা দিতে রাজি না হয়ে দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের ইনচার্জ এস এম মিজানকে জানান।
এ সময় দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসএম মিজানুর রহমান মিজান সাবেক এমপি আলী আজগর টগর, তার ভাই আলী মনসুর বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদিন নফর ও আলীহিমকে জানালে পুলিশ এসআই মিজান, সাবেক চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল রহিম শাহ চৌধুরী, দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহসান হাবীব, কনস্টেবল সাজিদুর রহমান, এএসআই দেবাশীষ একত্রিত হয়ে বিল্লাল হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
এরপর ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট রাতে অবৈধভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর নিজ বাড়ি থেকে বিল্লাল হোসেনকে অপহরণ করে দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর উজলপুর রাস্তার হরচরার মাঠে নামক স্থান নিয়ে যান। এ সময় আসামিরা বিল্লালকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও একাধিক গুলি করি হত্যা করেন। পরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বিল্লাল হোসেনের নিহতের নাটক সাজান তারা।
এ ঘটনায় আদালতের আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা শুনলে আসামিরা আমার (নিহত বিল্লালের বোন শালপোনা পারভিন) পরিবারকে অপহরণ গুম খুনের হুমকি দেন। এ জন্য তিনি এতদিনে মামলাটি দায়ের করতে পারেননি।
এ মামলার আইনজীবী চুয়াডাঙ্গা জজ কোর্টের অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল জানান, আদালত বাদীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সিআইডিকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সহকারী পুলিশ সুপার (সিআইডি) সাইফুল ইসলাম জানান, আমাদের হাতে কোনো কাগজপত্র আদালত থেকে এখনো এসে পৌঁছায়নি। আদালতের আদেশ আসলে তদন্ত কাজ শুরু করা হবে।