স্টাফ রিপোর্টার, মঞ্জুরুল আহসান, কাউনিয়া উত্তরাঞ্চলের অবহেলিত একটি জনপদের নাম কাউনিয়া, যা স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। নদীভাঙ্গনের শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া মানুষের হাহাকারের জন্যও কাউনিয়া পরিচিত এখন। সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও বিনোদন। অধিকার গুলোর মধ্যে এই উপজেলায় সবচেয়ে করুণ দশা শিক্ষার। উপজেলায় ১টি সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারী হলেও তা নামে মাত্র। ১টি কলেজ কে সরকারী করা হয়েছে সেটিও উপজেলার শেষ প্রান্ত হারাগাছ পৌরসভায়। শিক্ষার মান উন্নয়নে উপজেলা পর্যায়ে দৃর্শ্যত কোন পদক্ষেপ নেই। কৃষি বিভাগের পরিকল্পনা ও সরকারী ব্যবস্থাপনার অভাবে দরিদ্র মানুষের খাদ্যর অভাব দৃশ্যমান। বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে নদী ভাঙ্গা ও সল্পআয়ের নিরিহ মানুষ ঈদ পূজা ছারা সন্তানদের নতুন জামা কাপর দিতে পাচ্ছে না। শিক্ষার হার কাগজে কলমে বারলেও মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। কওমি মাদ্রাসা গুলোতে আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। কারিগরি প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে যারা বের হচ্ছে তারা কোন ধরনের কারিগর হচ্ছেন তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কিন্ডার গার্টের দাপটে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দিনদিন কমছেই। ইবতেদায়ীসহ অধিকাংশ মাদ্রাসা, মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে নেই একাডেমিক ভবন। নেই প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। কর্ম সংস্থানের জন্য গড়ে উঠেনি কারখানা। স্বাস্থ্য সেবার চিত্র হতাশা ব্যাঞ্জক। সেবার মান দেখে মনে হবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই এখন অসুস্থ। ডাক্তার ও ঔষধ সংকট নিত্য দিনের। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় রাস্তায় ডেলিভারীর মতো ঘটনা রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে আরএমও পদ শুন্য। আরএমও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকা বাধ্যতামূলক হলেও তিনি থাকেন না। কাগজে কলমে ডাক্তার থাকলেও বাস্তবে নেই। ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করণের সু-বিশাল অট্টালিকা থাকলেও জনবল না থাকায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত জনগণ। এক্স-রে মেশিন ২টি কোনদিনও চালানো হয়নি। বিদ্যুৎ চলে গেলে মেডিকেল হয় ভুতরে বাড়ি। নদী ভাঙ্গন ও কর্মসংস্থান না থাকায় দিনদিন বাসস্থানহীন মানুষের সংখ্যা দীর্ঘ হচ্ছে। ভূমিহীনদের জমি ও বাড়ি দেয়ার নামে হয়েছে অনেকটা দলিও করণ। সেই বাড়ি গুলোতে অনেকই থাকেন না। শিশুদের বিনোদনের জন্য নেই কোন শিশুপার্ক। বিনোদনের অভাবে অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে বিপদগামী হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার করুন চিত্র। কৃষি উৎপাদনে ভুমিকা রাখা চরাঞ্চলের মানুষের যোগায়োগের জন্য নির্মাণ করা হয়নি পাকা সেতু। খলিলের ঘাট ও মৌলভীবাজারে দুইটি পাকা সেতুর অভাবে ১৫ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। সেতু দুটি নির্মানে বিগত সময়ের জনপ্রতিনিধিরা শুধু আশার বানীই শুনিয়েছে। উপজেলা অধিকাংশ রাস্তাই ভাঙ্গাচুরা। উপজেলার ১৮০ কিঃ মিটার কাচা রাস্তা। এক সময়ের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের নাভী হিসেবে পরিচিত রেলওয়ে জংশন ষ্টেশনটিতে নেই আধুনিকতার ছোঁয়া। গণশৌচাগারের অভাবে মহিলা যাত্রীদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। পানি সংকট নিত্য দিনের। এক সময়ের উত্তরাঞ্চলের মৎস্য ভান্ডার নামে খ্যাত ধুম নদী এখন মৎস্য জীবি সমিতির নামে প্রভাবশালীর করাল গ্রাসে। মানুষের খাদ্যের যোগান দেয় যে কৃষক তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ৫৩ বছরেও হয়নি। কৃষকের উৎপাদিত সবজি সংরক্ষনের কোন হিমাগার নেই। খরস্রোতা তিস্তা নদী এখন পানি শূন্য ধু-ধু বালুর চর যা ৫৩ বছরেও ড্রেজিং এর কাজ হয় নি। বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙ্গন আর শুস্ক মৌসুমে পানির অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। ভয়াবহ আর্সেনিক এর থাবায় আক্রান্ত কাউনিয়া। পানি পরীক্ষার কীট পর্যন্ত নেই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরে। শিল্প কলকারখানা গড়ে না ওঠায় শিক্ষিত বেকারের সংখা বেড়েই চলছে। সার্বিক ভাবে কাউনিয়ায় স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও আধুনিক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। কাউনিয়াকে বৈষম্যহীন উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবী এলাকাবাসীর।