স্টাফ রিপোর্টার: রকিব হাসান রবিন, নকলা, শেরপুর
শেরপুরে মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা-ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোররাতে সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকাস্থ খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারে ওই ঘটনা ঘটে। এতে হামলাকারী ও হামলার শিকার উভয় পক্ষের অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। একইসাথে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় মাদ্রাসার সুপার মো. তরিকুল ইসলামসহ ২৫ জনকে স্বনামে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫শ জনকে আসামি করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন দরবার শরীফের খাদেম মাহমুদান মাসুম।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই মুর্শিদপুর দরবার শরীফের কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের জামতলা এলাকার ফারাজিয়া আল আরাবিয়া ক্বওমী মাদ্রাসার সুপার মো. তরিকুল ইসলাম, স্থানীয় মো. খোরশেদ, মো. মজিবুর, মো. শহিদুলসহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের একটি অংশ। তাদের অভিযোগ, পীরের দরবারে ইসলাম পরিপন্থী কার্যকলাপ পরিচালিত হয়। তাই দরবার বন্ধের দাবিতে এর আগেও মাদ্রাসা ও লছমনপুর এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি-বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ অক্টোবর দুপুর ২ ঘটিকার দিকে শেরপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার জন্য দিন ক্ষণ নির্ধারণ করেও কওমি / মাদ্রাসার আলেমরা উপস্থিত না হওয়ায় কোন আলোচনা ছাড়ায় বহাস সমাপ্ত হয়। দরবারের পক্ষে আলোচনার জন্য সম্মেলন কক্ষে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিশিষ্ট বক্তাগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদি ঢাকা, মুফতি হাসনাইন আহম্মদ কাদেরী ফেনী, মুফতি হাসানুর রহমান হোসাঈন নকশীবন্দী ঢাকা, মুফতি হাসান আল আজাহারী চট্টগ্রাম, মুফতি তামিম বিল্লাহ কাদেরী ঢাকা, মুফতি আসাদুজ্জামান জিহাদি জিনাইদহ।
এরই প্রেক্ষিতে ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোররাতে মাদ্রাসার সুপার মো. তরিকুল ইসলাম, স্থানীয় মো. খোরশেদ, মজিবরসহ ৪/৫শ মানুষ মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা চালায়। এসময় তারা দরবারের টিনের বেড়া ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায় অগ্নিসংযোগ মত বরবরতম কাজ সংগঠিত করেন । এসময় দরবারে থাকা খাদেম ও অন্যান্য মুরিদরা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন, আগুন এবং ভাংচুরের শব্দে ঘুম ভাঙ্গার পর বাধা দিলে উভয়পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন আহত হন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহতরা হচ্ছেন হামলাকারীদের মধ্যে আসিফ (২৫), শহিদুল ইসলাম (৩৫), আল মাসুদ (১৫), জিসান (২২) এনামুল হক (৩৫), হাফেজ (৩৯) ও জয়নাল (২৮)। এছাড়া মুর্শিদপুর দরবারের আহতরা হচ্ছেন আব্দুল কুদ্দুছ (৪০), মোহন মিয়া (৪০), মন্টু মিয়া (৪২), আরিফ হোসেন (১৬), মনির হোসেন (২৪) ও সফর মিয়া (৪৫)।
দরবারের খাদেম মো. মামুন অভিযোগ করে বলেন, হামলাকারীরা দীর্ঘদিন যাবত দরবার বন্ধের হুমকিসহ নানা অপতৎপরতা চালিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ভোরে তরিকুল ইসলাম, মজিবর, খোরশেদের নেতৃত্বে ৪/৫শ লোক দরবারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। আমরা ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার চাই।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসার সুপার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের আপসের কথা বলে দরবারে ডেকে নিয়ে মারধর করেছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দরবারে তারা নিজেরাই বিভিন্ন জিনিস ভাংচুর করে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছে।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুবায়দুল আলম জানান, বর্তমানে মুর্শিদপুর দরবার এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় এক পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।