স্টাফ রিপোর্টার, আব্দুল আলীম ইমতিয়াজ, (সুনামগঞ্জ) :
পরিচালনা কমিটির আভ্যন্তরীন কোন্দলে বিপর্যস্ত পড়াশোনা দিরাই উপজেলার হাতিয়া স্কুল এণ্ড কলেজের। ১ (ডিসেম্বর)রবিবার বিদ্যালয়ের পূর্ব নির্ধারিত বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে দরজায় তালা ঝুলিয়ে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সহ অন্য শিক্ষকরা জেলা শহরে চলে আসায় ক্ষুব্ধ হন অভিভাবকরা। অভিভাবকদের একটি পক্ষ বলেছেন, প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর ঐতিহ্যবাহি এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির কোন্দলে বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। অন্যদিকে, আরেকপক্ষ বলেছেন পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি একরার হোসেনের নিয়ম বহির্ভূত আচরণে স্কুলটির বেহাল অবস্থা হয়েছে।
১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দিরাই উপজেলার প্রত্যন্ত বিদ্যাপীঠ হাতিয়া স্কুল এণ্ড কলেজে বর্তমানে ৫০৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এই বিদ্যালয়ে গেল দুই বছর হয় পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে মামলা—হামলার ঘটনায় হতাশ অভিভাবকরা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাতিয়ার বাসিন্দা একরার হোসেন ও আরেক প্রভাবশালী ব্যক্তি একই গ্রামের শিশু মিয়ার দ্বন্দ্ব বহুদিনের। দুই বছর আগে নির্বাচন ছাড়াই সমঝোতার মধ্য দিয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতি হন একরার হোসেন। শিশু মিয়া ও তার সমর্থকরা এটি মেনে নিতে পারেন নি। তাদের পক্ষ থেকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও উন্নয়ন), মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এক পর্যায়ে এই দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সেই থেকে এই বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা চলছে। শিক্ষকরাও এই দ্বন্দ্বে যুক্ত হয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছেন। এ কারণে বিদ্যালয়ে পাঠদানসহ পরীক্ষা কার্যক্রমও বিঘ্নিত হচ্ছে।
গেল ২৮ নভেম্বর থেকে বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। দুটি পরীক্ষা নেবার পরই রবিবার তৃতীয় দিনের ইংরেজি পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে বিদ্যালয় তালাবদ্ধ করে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সহ দুয়েকজন শিক্ষক জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে গিয়েছেন শুনে একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন।
এলাকার শিক্ষার্থী অভিভাবক শিশু মিয়া বললেন, ‘গায়ে মানে না, আপনে মোড়ল’ হয়েছেন একরার হোসেন, জোর করে পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়েছেন তিনি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড তার কমিটি বাতিল করে, পরে হাইকোর্টে তিনি রিট করেছিলেন, হাইকোর্টেও রায় তার বিরুদ্ধে যায়। পরে কয়েক দফায় তিনি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে তার লোকজন দিয়ে মারধর করিয়েছেন। এখন মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের সারাদেশের কমিটি বাতিল হয়েছে। তবুও স্কুলে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন তিনি। আমরা গ্রামবাসী তার অনুগত তিন শিক্ষককে স্কুলে যেতে বারণ করেছি। এরা পাঠদান না করে, কেবল গ্রুপিং করে। প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) হেলাল উদ্দিনকে দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ করেছেন গ্রামবাসী।
এই বিষয়ে জানার জন্য একরার হোসেনকে বার বার ফোন এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও পাওয়া যায় নি।
তবে তার পক্ষের শিক্ষার্থী অভিভাবক হিসেবে পরিচিত স্থানীয় কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শামীম আহমদ বললেন, স্কুলের কমিটি গঠনের সময় আলাপ—আলোচনার মাধ্যমে একরার হোসেনকে পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয়। শিশু মিয়া নিজের মতামত একরার হোসেনকে সভাপতি করার পক্ষে দিয়ে সভা শুরুর কিছুক্ষণ আগে অন্য জরুরি কাজে যেতে হচ্ছে জানিয়ে ওঠে যান। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে এই কমিটি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তবে কতৃর্পক্ষ ওই কমিটি বহাল রাখে। এখন নানা অপরাধে ইতোপূর্বে বরখাস্তকৃত শিক্ষক হেলাল আহমদকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করায় স্কুলে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এছাড়া রবিবার বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে, স্কুলে তালা ঝুলিয়ে প্রধান শিক্ষক জেলা শহরে শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাওয়ায়ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন এলাকাবাসী।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বললেন, দ্বন্দ্ব গ্রুপিংয়ে বেহাল অবস্থা হাতিয়া স্কুল এণ্ড কলেজের। আদালতের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ায় প্রধান শিক্ষককে অফিসে ডাকা হয়েছিল। তিনি আসার পর শুনলাম বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে স্কুল বন্ধ রেখে এখানে এসেছেন, আমি তাঁকে এভাবে কেন আসলেন জানতে চাইলে তিনি, সংরক্ষিত ছুটি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বললেন, ‘স্থগিত পরীক্ষাটি শেষের দিকে নেওয়া হবে।’ এছাড়া স্কুলে শিক্ষক সংকটের কথাও জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।