মোঃ সেলিম রেজা, স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক দেশ প্রতিদিন ও ডিডিপি টেলিভিশন, গাংনী, মেহেরপুর
১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মেহেরপুরের ভৈরব নদের দু’পাড়ে নির্মিত করা হয় ওয়াকওয়ে। কয়েক বছরের ব্যবধানে দু’পাড়ের ওয়াকওয়ে ভাঙতে শুরু করেছে।
অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ড জমি অধিগ্রহণ না করেই জোরপূর্বক দু’ফসলা জমি দখল করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করেছে ওয়াকওয়ে। ইতোমধ্যে সেটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, খুব দ্রুত সময় ভাঙ্গা স্থানগুলো মেরামত করা হবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২৩ সালে জানুয়ারী মাসে মেহেরপুরের ভৈরব নদের দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মানের সীদ্ধান্ত নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে ১৮ কি.মি. নির্মান কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার সৈকত এন্টারপ্রাইজ।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করেন ওয়াকওয়ে। ওয়াক ওয়েতে ঠিকমতো বালি ও এক নম্বর ইট দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি।
ওয়াকওয়ে দু’পাশে মাটি ভরাট না করায় কিছুদিন পরই হালকা বৃষ্টিতে ওয়াকওয়ে বিভিন্ন স্থান দেবে গেছে। পানি নিষ্কাশনের পাইপ ও পাড়ের মাটি রক্ষায় কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় কোথাও কোথাও শখের ওয়াকওয়ে বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। ফলে একদিকে যেমন সরকারের উন্নয়নের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা গেছে অন্যদিকে সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন এলাকাবাসী।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কালী গাংনীর সবজি ব্যবসায়ি মহিবুল জানান, তিনি নদীর পাড়ের ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করেন। আগে কাচা রাস্তায় যাওয়া যেতো। এখন পাকা হেরিংবন্ড করায় মনে আশা জাগলেও সেটি হচ্ছে না। রাস্তাটি নষ্ট হয়ে যাওয়া চলাচলে বেশ দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মেহেরপুর শহরের শ্মশান ঘাট এলাকার কৃষ্ণ নারায়ণ নারায়ণ চক্রবর্তী জানান, আমাদের শ্মশান ঘাট এলাকার একটি স্থানে একখানি ভেঙ্গে গেছে। ফলে মরদেহ শ্মশানে আনতে অনেক কষ্ট হয়।
তবে ওয়াকওয়ে নির্মাণের আগে ভালো ছিল। বর্তমানে ওয়াকওয়ে আমাদের কোন কাজে আসছে না। বরং ওয়াকওয়ে আমাদের মত সাধারন মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যে সকল কর্মকর্তারা এরা দায়িত্বে রয়েছে তারা যদি সঠিকভাবে কাজটি সম্পাদন করত তাহলে ভাঙ্গা অবস্থায় দেখতে হতো না ওয়াকওয়েকে। তবে দ্রুত মেরামতের দাবিও জানান তিনি।
মুজিবনগর উপজেলার ভবেরপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি জাহিদুল ইসলাম জানান, ভৈরব পাড়ে নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে মেহেরপুর শহরে কাজ করতে যেতাম। ফলে একদিকে যেমন সময় সাশ্রয় হতো অন্যদিকে মোটরসাইকেলের জ্বালানি খরচ কম লাগতো।
বর্তমানে অনেক জায়গা ভেঙ্গে যাওয়াই ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওয়াকওয়ে এখন মেহেরপুরবাসীর কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাহাবুবুল হক পোলেন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের একরকম জোর করেই দু’ফসলা জমি দখল করে তৈরি করেছে ওয়াকওয়ে। সরকারীভাবে কারো কাছ থেকে জমি অধিগ্রহন করেনি।
স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার পেশী শক্তির বলে ওই জমি জবর দখল করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে। কিছু বলতে গেলেই নানা ধরনের হুমকী দেয়া হতো। শুধু মাহাবুবুল হক পোলেন নয়, স্থানীয়দের অনেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে জমি জবর দখলের অভিযোগ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জমির মালিক জানান, সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও সাবেক জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভৈরব নদের পাড়ে সাধারণ অসহায় কৃষকের জমি জোরপূর্বক কল করে নির্মাণ করেন ওয়াকওয়ে।
ওয়াকওয়ে কাজে বাঁধা দিতে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রীর গুন্ডাবাহিনী দিয়ে জমির মালিকদের উপর নির্যাতন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
তারা আরো জানান, কোটি টাকা মূল্যের জমি প্রকাশ্য দিবালোকে দখল করে নেন পানি উন্নয়নের বোর্ডের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে অনেকেই মামলা করেছেন।
মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হান্নান জানান, ওয়াকওয়ে নির্মাণে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। বৃষ্টির কারণে কিছু অংশ ভেঙে গেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হয়েছে দ্রুত সময়ে মধ্যে ভাঙা স্থান মেরামত করা হবে।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো জমি দখল করা হয়নি। ২০১৩ সালের নদী সংরক্ষণ আইন মেনেই ভৈরব নদীর দুপাড়ে ওয়াকওয়ে তৈরি হয়েছে।