আল আমিন, কক্সবাজার:
৪৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা নির্ভরশীল এই হাসপাতালটিতে জনবল সংকট, বেতন বন্ধ, ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বিশেষায়িত বিভাগগুলো। রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না, চিকিৎসকরাও পড়েছেন মানবিক বিপর্যয়ের মুখে।
আইসিইউ ও সিসিইউতে চিকিৎসা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ। মাত্র ১ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন ৭ জন রোগীর চিকিৎসার জন্য। গত ৯ মাস ধরে কেউ বেতন পাননি। এরইমধ্যে ৯৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী পদত্যাগ করেছেন, অবশিষ্ট ৮২ জন বিনা বেতনে মানবিক বিবেচনায় কাজ করছেন। আইসিইউ বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. কপিল উদ্দিন আব্বাস জানিয়েছেন, প্রকল্প চালু না হলে তারা আর কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন না।
জরুরি বিভাগে নেই কোনো নিরাপত্তারক্ষী। ফলে প্রতিদিন ঘটছে মারামারি, চুরি-ছিনতাই। রোগী ও স্বজনদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। চিকিৎসা নিতে এসে অনেকে দিনের পর দিন চিকিৎসক না পেয়ে হতাশ। অনেকেই সিট না পেয়ে লিফটের পাশে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সহায়তা প্রকল্প (এইচজিএসপি)’ চালু হলেও ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়। সাময়িক সময় বাড়ানো হলেও গত ৯ মাসে কোনো বরাদ্দ আসেনি। নতুন প্রকল্প ‘ইনক্লুসিভ সার্ভিসেস অপারেটিং (আইএসও)’ চালুর বিষয়ে আশ্বাস মিলেছে, কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
৩০ লাখ স্থানীয় মানুষ, ১৫ লাখ রোহিঙ্গা এবং প্রতি বছর আগত কয়েক লাখ পর্যটক এই হাসপাতালের সেবার ওপর নির্ভর করে। অথচ ২৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকে ৯০০ জন রোগী। জরুরি বিভাগে আসে প্রায় ৫০০ এবং বহির্বিভাগে আড়াই হাজার রোগী। বর্তমানে হাসপাতালের ৩২৮টি সরকারি পদের মধ্যে ৭৬টি পদ শূন্য রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, জনবল সংকট নিরসন, বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং স্থায়ী নিয়োগ ছাড়া এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। সরকারি হস্তক্ষেপ এবং দ্রুত প্রকল্প অনুমোদন ছাড়া হাসপাতালের বিশেষায়িত বিভাগগুলো টিকিয়ে রাখা কঠিন। এই সংকট শুধু কক্সবাজারের নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ের মানবিক সংকট।