মো: মেহেদী হাসান,পটুয়াখালী :
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় গভীর নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক জোয়ার এবং টানা দুইদিনের ভারী বৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙে উপজেলা কয়েকটি গ্রাম ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ডুবে গেছে হাজারো মৎস্য ঘের, পুকুর ও কৃষি জমি। ভাঙ্গা বাঁধদিয়ে পানি ঢুকে ভাসছে-ডুবছে হাজার হাজার মানুষ।
জানাগেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় উপজেলা রাঙ্গাবালীতে গত দুই দিনের টানা বৃষ্টি এবং অমাবস্যার প্রভাবে অস্বাভাবিকভাবে নদ-নদী পানি বৃদ্ধি পায়। এতে করে উপজেলার চালিতাবুনিয়া ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পরে ঘের বাড়ি-পুকুর তলিয়ে যায়। এছাড়াও চরমোন্তাজ ইউনিয়নের নয়ারচর এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রক বাঁধের বাহিরে বসবাস করা লোকজনের বাড়ীঘর জোয়ারের পানিতে ভেসে যায়। পাশাপাশি উপজেলার ওইসব ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের বাহিরে থাকা মাছের ডুবে গিয়ে মাছ ভেসে যায়। ফলে মৎস্যচাষীদের চোখে-মুখে এখন শুধুই হতাশা।
মৌডুবী ইউনিয়নের আশাবাড়িয়া এলাকার মৎস্য ঘের মালিক লিটু গাজী বলেন, অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে আমার ঘেরটি তলিয়ে গেছে। এতে করে আমাদের প্রায় কয়েক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। একই কথা জানালেন আরেক ঘেরের মালিক মিন্টু সরদার তিনি বলেন, মৌডুবীর আশাবাড়িয়ার এই চরে আমারসহ প্রায় ৩০টির অধিক ঘের রয়েছে। সবগুলো ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে এতে প্রায় কোটি টাকা ওপরে আমাদের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মধ্য চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ওমর সানি আক্ষেপ করে জানান, জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙ্গে ও ছেড়া বাঁদ দিয়ে চালিতাবুনিয়ার পুরো এলাকা তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে এই এলাকায় এক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠা দুষ্কর। আমাদের আর কিছু রইল না। একেতো নদীভাঙনে নিঃস্ব এলাকার মানুষ। আবার বর্ষা মৌসুমে জলোচ্ছ্বাস হয় প্লাবিত। এখানে জন্মটাই বোধহয় পাপ।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গাবালীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মাছ চাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার ৩০০টি পুকুর এবং ৬৫০টি মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। এতে বিপুল পরিমাণ চাষের মাছ পানিতে ভেসে গেছে এতে চাষিদের প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া, কৃষি অফিস সূত্র জানা গেছে, আউশ ধানের ৮ হেক্টর বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সবজি ক্ষেতও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মোট ২৬০ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে স্থানীয় কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
দুর্যোগের প্রভাবে সাধারণ মানুষদের জীবনযাত্রাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় রাঙ্গাবালীতে অন্তত ৩৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৬০টি ঘরবাড়ি। স্থানীয় বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৪০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে এবং দুর্গতদের সহায়তায় ইতোমধ্যে ১১ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ ইকবাল হাসান বলেন, ‘গভীর নিম্নচাপ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে বাঁধ ভেঙে উপজেলার চালিতাবুনিয়া ও চরমোন্তাজ ইউনিয়নের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমরা দুর্গতদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিরাপদে রাখতে পেরেছি এবং প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, আরও ত্রাণ সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব করে দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে।’