আবদুল্লাহ আল মামুন,চুয়াডাঙ্গা :
চুয়াডাঙ্গায় চাঞ্চল্যকর পৃথক দুটি হত্যা মামলায় ৩ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ সময় প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আকবর আলী শেখ আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর আসামিদের পুলিশি প্রহরায় কোর্ট কাস্টডিতে নেয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার গঙ্গাদাসপুর গ্রামের মাঝের পাড়ার মৃত ইব্রাহীম মন্ডলের ছেলে জমির উদ্দীন (৫০), আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী ইউনিয়নের বামানগর গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে স্বাধীন আলী (৪০) ও চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ফার্মপাড়ার মৃত বিপ্লব হোসেনের ছেলে আশিকুর রহমান আশিক ওরফে বাদশা (৩৮)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর মারুফ সারোয়ার বাবু।
আদালত সূত্রে জানা, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা গ্রামের কামাল হোসেনের সাথে একই গ্রামের সালাউদ্দীন গংদের জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই সূত্র ধরে ২০২২ সালের ৯ মে রাতে স্বাধীন আলীসহ তার লোকজন মিলে কামাল হোসেনকে বাড়ি থেকে কৌশলে ডেকে নেয়। এরপর জমিজমা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্বাধীন আলী ও আশিকুর রহমান আশিক ওরফে বাদশা সহ ১৫-২০ জন মিলে তাকে কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে চলে যায়। এ খবর পেয়ে আহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশের সহযোগিতায় তার স্বামী কামাল হোসেনকে পার্শ্ববর্তী একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এ সময় তিনি তার স্ত্রীকে জানান, স্বাধীন, রফিক, স্বপন, স্বাধীনের স্ত্রী, স্বাধীনের শাশুড়ি, শালিকাসহ অন্যরা মিলে তাকে কুপিয়ে জখম করেছে। এ কথা বলতে বলতে তিনি নিস্তেজ হয়ে যান। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনা নিহতের স্ত্রী সেলিমা আক্তার বাদী হয়ে ১১ মে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আকরামুল হোসাইন মামলার তদন্ত শেষে ৭জনকে অভিযুক্ত করে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
২৭জন সাক্ষীর মধ্যে ২৫ জনের সাক্ষগ্রহণ শেষে বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে স্বাধীন আলী ও আশিকুর রহমান আশিক ওরফে বাদশাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। সেই সাথে তাদের দুজনকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। মামলায় ৫জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
অপর একটি মামলায় চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের গঙ্গাদাসপুর গ্রামের মাঝপাড়ার মৃত রমজান মন্ডলের ছেলে বাবলুর রহমানের সাথে একই এলাকার ইব্রাহীম মন্ডলের ছেলে জমিরউদ্দীনের বিরোধী চলে আসছিলো। এরই জের ধরে ২০২২ সালের ১৬ জুন সকালে ওই গ্রামের ফজলুর চায়ের দোকানের সামনে বাবলুর রহমানকে একা পেয়ে জমির উদ্দীন কোদালের ধারালো অংশ দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী চায়না খাতুন বাদী হয়ে জীবননগর থানায় জমির উদ্দীনকে (৪৮) আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জীবননগর থানার এসআই সৈকত পাড়ে জমিরকে অভিযুক্ত করে ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালত ২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা দায়রা জজ আদালতে আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামি জমির উদ্দীনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। এছাড়াও আসামিকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মারুফ সরোয়ার বাবু বলেন, চুয়াডাঙ্গা পৃথক দুটি হত্যা মামলায় ৩জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট। আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ সক্ষম হয়েছে।