নোটিশ:
Welcome To Our Website...
ব্রেকিং নিউজ :
সিংগাইরে কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা মে মাসের শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা কুড়িগ্রামে যাকাত ফাউন্ডেশনের খাদ্য সামগ্রী ও ছাগল বিতরণ কার্যক্রম চট্টগ্রাম এর সন্দ্বীপে নারী ও শিশু উন্নয়নে সচেতনতামূলক কমিউনিটি সভা অনুষ্ঠিত নিকলীতে পিএফজির ত্রৈমাসিক সভা অনুষ্ঠিত নিকলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আশেক আলীর মৃত্যু ট্রেনিংয়ে যাওয়ার পথে ঠাকুরগাঁও হিসাবরক্ষণ অফিসের কর্মকর্তাসহ প্রাণ গেল চার জনের নওগাঁর পত্নীতলায় নারী উদ্যোক্তার পুকুরে বিশ প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার লসে ভুগছেন গাজীপুরে ৭ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ এক নারী মাদক কারবারি আটক লালমনিরহাটে তিন সাংবাদিকের উপর হামলায় সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম গঠনের আহবান

মে মাসের শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫
  • ২৭ বার পঠিত

আল আমিন,কক্সবাজার :

 

বছর ঘুরতে আবারও সেই মে মাসেই দেখা দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা। গত বছর ২৭ মে উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল। আম্ফান, মোখার মতো ঘূর্ণিঝড়ও আঘাত হেনেছিল মে মাসেই। বিগত পাঁচ বছরে সাতটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের পাঁচটিই ছিল মে মাসে।
এবারও মাসের শেষ দিকে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের পূর্বাভাস পরবর্তীসময়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মে মাসে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) শুরু হওয়ার আগে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রবণতা বাড়ে। নভেম্বর মাসে বর্ষা শেষ হয়, অর্থাৎ মৌসুমি বায়ু বিদায় নেয়—এই ট্রানজিশন পিরিয়ডে আবহাওয়ায় অস্থিরতা তৈরি হয়, যা ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম দিতে পারে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সাধারণত বর্ষার আগ মুহূর্তে সাগরে নিম্নচাপের আশঙ্কা প্রবল থাকে। নিম্নচাপটি হতে পারে মে মাসের ২৩ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে। এখন এই নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কি না সেটা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ‘সমুদ্রের উষ্ণতা, মৌসুমি বায়ুর পরিবর্তন ও বঙ্গোপসাগরের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে মে মাস ঘূর্ণিঝড় গঠনের জন্য অনুকূল। এ মাসের ২৩ তারিখে সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। ২৫ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে যে কোনো দিন আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়। বিগত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, মে মাসের চতুর্থ সপ্তাহ ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য সময়।’
তিনি বলেন, ‘এ মাসের ২৭ তারিখ অমাবস্যা হতে পারে। পূর্ণিমার রাতে সাগরে জোয়ারের উচ্চতা অনকে বেশি থাকে। ওই সময় যদি ঘূর্ণিঝড় হয়, তখন এটা ভয়ংকর হবে। তবে আশা করছি এর আগে সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে।’
এ মাসের ২৭ তারিখ অমাবস্যা হতে পারে। পূর্ণিমার রাতে সাগরে জোয়ারের উচ্চতা অনেক বেশি থাকে। ওই সময় যদি ঘূর্ণিঝড় হয়, তখন এটা ভয়ংকর হবে। তবে আশা করছি এর আগে সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে।-কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ
বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের (বিডব্লিউওটি) দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সাধারণত মে মাসের ২০ থেকে জুন মাসের ১৯ তারিখের মধ্যে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে বর্ষা ঋতুর আগমন ঘোষণা করে। মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ সীমানায় এখন অবস্থান করছেন। এর আগেই ঘূর্ণিঝড়ের সিস্টেম তৈরি হয়। বঙ্গোপসাগরের বর্তমান অবস্থা একটা সাইক্লনিক ঘূর্ণিবার্তার জন্য প্রস্তত হয়ে আছে, যা নিম্নচাপ অবস্থা থেকে ক্যাটাগরি-১ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ের আদলে রূপ গ্রহণ করতে পারে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় শেষেই মে’র শেষ সপ্তাহে মৌসুমি বায়ুর অগ্রভাগ দেশের উপকূলভাগে এসে স্থলভাগের শুষ্ক বাতাসের সঙ্গে আন্তঃক্রিয়ায় প্রাক মৌসুমি বজ্রবৃষ্টি এবং খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই তথা জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বর্ষার আগমন ঘোষণা করতে পারে।
জানা যায়, বিগত পাঁচ বছরে সাতটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করে বাংলাদেশ। যার মধ্যে চারটি ছিল মে মাসে, বাকি তিনটি অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া এসব ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আঘাত হেনেছে। এসব ঘূর্ণিঝড় ও তীব্র জলোচ্ছ্বাসে প্রাণহানি, ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও ক্ষতির শিকার হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবশেষ ২০২৪ সালে ২৭ মে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশে আঘাত হানে। এটি পটুয়াখালীর খেপুপাড়া দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার। এর আগে ২০২৩ সালে তিনটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাংলাদেশে। ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলী’ পটুয়াখালী উপকূলে আঘাত হানে। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০২ কিলোমিটার। একই বছরের ১৪ অক্টোবর কক্সবাজারে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৭ কিলোমিটার। ওই বছরের ২৪ অক্টোবর কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০৪ কিলোমিটার।
আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে আমার মিটিং হয়েছে। ২৩ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। এটা কতটা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হবে সে বিষয় এখনো নিশ্চিত নয়।-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান
এছাড়া ২০২০ সালের ২১ মে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’। যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার। ২০২১ সালে একই অঞ্চলে আবারও আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার। ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর বরিশালে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’। যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯৫ কিলোমিটার।
২০২৪ সালের ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানে বরগুনা, সাতক্ষীরা, খুলনা ও পটুয়াখালী এলাকায়। এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক লাখ পরিবার। কেবল খুলনা অঞ্চলে ১৫ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়। অনেক জায়গায় আজও বাঁধ মেরামত হয়নি।
রিমাল পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উপকূলীয় এলাকার ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে, আর আংশিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার ঘরবাড়ি।
এছাড়া কৃষি বিভাগ জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে শুধু উপকূলীয় বরিশাল অঞ্চলেই ৫০৮ কোটি ৯৭ লাখ ৭২ হাজার টাকার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় এক লাখ ৭৩ হাজার ৪৯১ জন কৃষক। প্রাথমিকভাবে ৪৮টি জেলার কৃষিতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব ছিল।
এবারের প্রস্তুতি কতটা?
বাংলাদেশের অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে উপকূলে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে সরাসরি আঘান হানে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় নিয়ে ভয় যতটা প্রকৃতির, তার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা ‘প্রস্তুতির অভাব’ ও ‘আগের ক্ষতি কাটিয়ে না ওঠা’ নিয়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের রোষানলে পড়ে উপকূলবাসী যেন প্রতি বছর আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়ছে।
লোকাল এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল রিসার্চ সোসাইটির (লিডারস) নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল বলেন, ‘প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা উপকূলবাসীর জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ অর্থনৈতিক ক্ষতিটা দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াচ্ছে। এই মৌসুম এলেই কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষদের দুশ্চিন্তা বহুগুণ বেড়ে যায়। আগের ঘূর্ণিঝড়গুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বহু মানুষ এখনো অসহায় হয়ে আছেন।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষতি বিবেচনা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানো যাবে না, কিন্তু যথাসম্ভব প্রস্তুতির মাধ্যমে দুর্যোগকবলিত মানুষকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা সম্ভব। এখন থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সংস্কার জরুরি। অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না, এটা একটা বড় সমস্যা। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসাটা জরুরি।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ‘আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে আমার মিটিং হয়েছে। ২৩ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। এটা কতটা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হবে সে বিষয় এখনো নিশ্চিত না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা উপকূলীয় অঞ্চলে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছি। উপকূলীয় উপজেলাগুলোসহ প্রায় সারাদেশে ১৫ কোটি টাকা পাঠিয়েছি। শুকনো খাবার মজুত রাখা আছে। আমাদের যে সাইক্লোন শেল্টার আছে, সেগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। ৮০ হাজার ভলেন্টিয়ারও আছে। মোটামুটি আমরা প্রস্তুত।’
বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রণজিত কুমার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এতে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হবে স্বাভাবিক। আর আমরা যেহেতু উপকূলের মানুষ আমাদের প্রায় সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। এবছরও আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৪১টি সাইক্লোন সেন্টার, ৫শ মেট্রিক টনের ওপরে চাল, শুকনো খাবার ও নগদ ৩০ লাখ টাকার বেশি মজুত রয়েছে। এছাড়া যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা করতে প্রস্তুত জেলা প্রশাসন।’
পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ঘনত্ব বাড়ছে। কিন্তু ঘন ঘন দুর্যোগের মধ্যে পড়ে থাকা উপকূলীয় জনগোষ্ঠী প্রতিবারই নতুন করে গড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে না।
ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও ধরিত্রী রক্ষায় আমরার আহ্বায়ক শরিফ জামিল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে প্রস্তুতি ও ঘূর্ণিঝড়কালীন এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী তিনটি স্টেজে স্থানীয় প্রশাসনকে ভূমিকা নিতে হবে। মানুষকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। দুর্যোগের সময় শুধু ত্রাণ নয়, দীর্ঘমেয়াদিন পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান জরুরি। নইলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে, সহনশীলতা কমবে।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2024 দৈনিক দেশ প্রতিদিন
Design & Development By HosterCube Ltd.