স্টাফ রিপোর্টার, আরিফুল ইসলাম মুরাদ সাংবাদিক ও সংগঠক
বাংলাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক দর্শনীয় স্থান। তেমন একটি স্থান নেত্রকোণার সুসং দুর্গাপুর। এর মূল আকর্ষণ সাদা মাটির পাহাড়, রানীখং গির্জা ও সোমেশ্বরী নদী। এর জন্য আপনাকে যেতে হবে বিজয়পুর চিনামাটির পাহাড়ে। এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় সবাই গারো ও হাজং। তাই জেনে নিন সুসং দুর্গাপুরে দেখার কী কী আছে-তা
আরিফুল ইসলাম মুরাদ তার কবিতায় এভাবেই আহ্বান জানিয়েছেন,
মান্যবর কবিগণ
মান্যবর কবিগণ, কাঁটাতার ঘেষা
সুসঙ্গ রাজ্যে একবার বেড়িয়ে যান।
বিজয়পুরের সাদা মাটির পাহাড়
সংকর জাতি অধ্যুষিত বিরিশিরি
বঞ্চিত মানুষের কথা লিখে নিয়ে যান।
দেশত্যাগী নৃ-গোষ্ঠীর স্থাবর অস্থাবর
নগ্ন শরীরে পথে দাঁড় করানোর গল্প
হাজার টাকায় হাতি বেঁচাকেনা আর
টংক আন্দোলনের গর্বিত স্মৃতিসৌধ
লুটেরা মহাজনের নির্লজ্জ ইতিহাস
পান্ডুলিপি সাজিয়ে শহরে নিয়ে যান।
মাটির দূর্গ,ভূইয়াদের কল্প কাহিনি
ব্রিটিশ আমলের ঐতিহাসিক স্থান
সাগর দিঘির অজানা রূপকথা
মাটিতে মিশে আছে রানীর নূপুর ,
হিন্দু মুসলিম গারো হাজং কোচ
একই বলয়ে বসবাসরত তীর্থ ভূমি
সোমেশ্বরীর তরঙ্গে মুখরিত দুর্গাপুর।
সাহিত্য সংস্কৃতির জীবন্ত নিদর্শন
একাডেমির পটভূমি দেখে শান্ত হবে প্রাণ।
মান্যবর কবিগণ,
সুসঙ্গ রাজ্যে শুধু একবার বেড়িয়ে যান!
কংশ নদী: কংশ নদী ভারতের মেঘালয় ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের শিলং মালভূমির পূর্বভাগের তুরার কাছে গারো পাহাড়ে এই নদীর উৎপত্তি।
সোমেশ্বরী নদী: সোমেশ্বরী নদী স্বচ্ছ পানি আর ধু-ধু বালুচরের জন্য বিখ্যাত। সোমেশ্বরী নদী বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলায় প্রবাহিত। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝরনা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীর সৃষ্টি। সাদা মাটির পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে অপরূপ নীলের উৎস এ নদী। যা বর্তমানে কয়লাখনি হিসেবে পরিচিত।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি: দুর্গাপুরের বাসস্ট্যান্ডের পাশেই অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনযাত্রার নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে।
রাশিমণি, স্মৃতিসৌধ : দুর্গাপুর বাজার থেকে বিজয়পুর পাহাড়ে যাওয়ার পথে কামারখালী বাজারের পাশে বহেরাতলীতে অবস্থিত রাশিমণি স্মৃতিসৌধ। সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বগাঝরা’ নামক গ্রামটি ছিল ব্রিটিশবিরোধী গ্রামগুলোর মধ্যে একটি। রাশিমণি সেই গ্রামের একজন প্রতিবাদী মানুষ ছিলেন। ব্রিটিশ মহাজন ও জোতদারদের অন্যায় নীতির বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়ান। হয়ে ওঠেন টংক আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী।
সাদা মাটির পাহাড়: দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া ও মাইজপাড়া মৌজায় বিজয়পুরের শসার পাড় এবং বহেরাতলী গ্রামে সাদা মাটি অবস্থিত। পাহাড় ও সমভূমিসহ এর দৈর্ঘ প্রায় ১৫.৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৬০০ মিটার। এখান থেকে চীনা মাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ নীল রঙের জলাধারগুলো দেখতে অত্যন্ত চমৎকার।
আত্রাখালি নদী: আত্রাখালি নদী সুসং দুর্গাপুর বাজারের উত্তর দিক দিয়ে সোমেশ্বরী নদী থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। কিছু দূর এগিয়ে সোমেশ্বরীর মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
সেন্ট যোসেফের গির্জা: গির্জাটি বেশ সাজানো-গোছানো, নীরব আর খুব সুন্দর
রানীখং গির্জা: দুর্গাপুর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর সীমান্তে পাহাড়ের চূড়ায় রানীখং গির্জা অবস্থিত। এ পাহাড়ের চূড়া থেকে বিরিশিরির সৌন্দর্য যেন অন্য মাত্রা পায়।
জমিদার বাড়ি: একসময় দুর্গাপুর ছিল সুসং রাজ্যের রাজধানী। ৩ হাজার ৩৫৯ বর্গমাইল এলাকা ও প্রায় সাড়ে ৯শ’ গ্রাম নিয়ে প্রতিষ্ঠিত সুসং রাজ্যের রাজধানী ছিল এটি। বর্তমানে এটি নেত্রকোণার একটি উপজেলা। সোমেশ্বর পাঠক থেকে শুরু করে তার পরবর্তী বংশধররা প্রায় ৬৬৭ বছর শাসন করেন এ রাজ্য।