নোটিশ:
Welcome To Our Website...
ব্রেকিং নিউজ :
সুনামগঞ্জের মোঙলারগাঁওবাসীসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ অঘটন থেকে রক্ষা পেলেন শেরপুরে ইজতেমা শেখহাটি শেরপুর তাবলীগ জামায়াত মূল ধারার সাথীদের নিয়ে ইজতেমায় সমাগম আশুলিয়ায় চুরি হওয়া নবজাতক শিশু উদ্ধার, এক দম্পতি আ’টক জগন্নাথপুরে স্টুডেন্ট কেয়ারের শীতবস্ত্র বিতরণ হাতিয়ায় নৌকা ডুবে দূর্ঘটনায় দুজন নিখোঁজ, দুজনের মৃ’ত্যু   শান্তিগঞ্জে বিএনপির কর্মীসভা অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জে টিআরসি নিয়োগে ৭২ জনের স্বপ্নপূরণ ইনকাম তল্লাশি অভিযানে সোর্সসহ এসআই ইউনুছকে গণপিটুনি পটুয়াখালী জেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ সুপারের প্রেসব্রিফিং ছাতকে আওয়ামীলীগের নেতাকে গ্রে’প্তারের দাবিতে মানববন্ধন

সুনামগঞ্জের ধোপাজানে বালু-পাথর বের করার আরেক কৌশল

  • আপডেট সময় শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪
  • ২৬ বার পঠিত

স্টাফ রিপোর্টার, মোঃ আরিফুল ইসলাম মুরাদ,
নেত্রকোনা
মাস দুয়েক আগেও উত্তোলন নিষিদ্ধ ধোপাজান বালু-পাথর মহাল থেকে প্রকাশ্যে হাজার হাজার ফুট বালু-পাথর নিয়ে শত শত বাল্কহেড যেতো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কঠোর অবস্থানে প্রকাশ্যে এই লুটতরাজ বন্ধ হলেও বালুখেকোরা ছাড়ছে না ধোপাজানকে। তারা এখন গভীর রাতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিনই বালু-পাথরবাহী নৌযান বের করার অপচেষ্টা করছে। পুলিশের চেকপোস্ট ও নৌ ব্যারিকেড থাকা স্বত্ত্বেও কিভাবে বের হচ্ছে এসব নৌকা? এমন রহস্য খুঁজতে গেল ২২ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বর (মঙ্গলবার) পর্যন্ত পাঁচদিন শহরের একটি এলাকার নদীর তীরে গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করে মিলে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। নৌকা ধরা ছাড়ার ব্যবসা চোখে পড়ে এ প্রতিবেদকসহ গণমাধ্যমকর্মীদের। অর্থাৎ নৌকা ধরলেও লাভ, ছাড়লেও লাভ। জেলার উর্ধ্বতন পুলিশ কর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এই সুযোগ দেয়ার অধিকাংশ অভিযোগ নদীর টহলে দায়িত্বে থাকা ডিবি পুলিশের কিছু অসাধু সদস্যদের বিরুদ্ধে। এতে ¤¬ান হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগে নৌকা আটকানোর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কঠোর পরিশ্রম। গেল ২২ নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে এক সাথে বের হচ্ছিল বেশ কয়েকটি নৌকা। এরমধ্যে ৩টি স্টিলের নৌকাকে আটকায় একজন। নৌকার দুইজন মাঝি (নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানায়, দুইদিন আগে মনিপুরী ঘাট এলাকা থেকে করিমের (ছদ্মনাম) দুইটি ও রহিমের (ছদ্মনাম) একটি বালুভর্তি স্টিলের নৌকা আটক করে নিয়ে আসে ডিবি পুলিশ। দুইদিন পর ৭৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ৩টি নৌকা পুরাতন পুলিশ ফাঁড়ির (লঞ্চঘাট এলাকা) থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন তারা। কোন ডিবি সদস্যের কাছ থেকে নিয়ে এসেছেন সেটি জানতে না পারলেও, মেহের নামের এক বালু ব্যবসায়ী নৌকা ছাড়ানোর মধ্যস্থতা করেছেন বলে জানায় তারা। বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে শহরের সাহেব বাড়িঘাট এলাকার মেহেরের মোবাইল নম্বর পাওয়ার পর ফোন দিলে প্রথমে নিজেকে বালু ব্যবসায়ী মেহের বলে নিশ্চিত করেন। পরে বালুর কথা বলতেই ফোন কেটে দেন। এরপর বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও আর ফোন ধরেন নি। ঘন্টাখানেক পর ফোন দিয়ে নিজেকে মেহের নন বলে জানান তিনি। আগে অন্য কেউ রিসিভ করে মজা করেছে বলেন তিনি।পরের দিন শনিবার রাতে আরও বিশ থেকে ত্রিশটি নৌকা চলতি নদী থেকে বের হয়ে সুরমা নদীতে আসে। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি নৌকা চলে গেলেও সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর অভিযানে বালু আনলোড করা অবস্থায় আটক হয় ৭টি নৌকা। নদীর পাড়ে পাওয়া যায় সদ্য আনলোড করা অবৈধভাবে আনা বালু। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় বিভিন্ন জায়গায় তাড়া করে গ্রেফতার করা হয় ১০ জনকে। তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযানের পর সেনাবাহিনী চলে যায়। এরপর আবার পালিয়ে যাওয়া শ্রমিকরা একত্রিত হলে কথা হয় তাদের সাথে। শ্রমিকরা জানান, ১০টি নৌকা পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে বের করে নিয়ে এসেছেন তারা। কথা ছিল বের হওয়ার সময় কেউ বাধা দেবে না। এই সাহসে নৌকা নিয়ে আসলেও সেনাবাহিনীর হাত থেকে পালাতে পারেন নি তারা। সেনাবাহিনী তাদের ৭ টি নৌকা আটক করে নিয়ে গেছে। এই অভিযানের পর রবিবার রাত ১টা পর্যন্ত কোন নৌকা বের হতে দেখা যায়নি। তবে সোমবার সন্ধ্যার পর আবার বের হয় বালুবাহী নৌকা। নিচে পাথর ভর্তি করে উপরে বালুর প্রলেপ দিয়ে সুকৌশলে বের হয় শ্রমিকরা। এদিনও দশ থেকে পনেরটি নৌকা বের হয়েছে বলে জানা যায়। খবর পেয়ে সাথে সাথে ফোর্স পাঠিয়ে আগের জায়গা থেকেই তিনটি নৌকা আটক করেন সদর থানার ওসি। দুই অভিযানের পরে মঙ্গলবার আর নৌকা বের হতে দেখা যায় নি। সুনামগঞ্জ সদর তহশিল অফিসের একজন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নাম না লিখার অনুরোধ করেছেন তিনি) বললেন, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ রেখে আমরা আলোচিত এই বালু-পাথর মহালে ডিউটি করি। যখনই আমাদের লোকজন সরে আসে, কোনদিন বিকেলে, কোনদিন সন্ধ্যা বেলা, কোন দিন ভোরে আবার কোন কোন দিন গভীর রাতে বালু-পাথর বোঝাই করে নৌকা বের হয় ওখান থেকে। যারা রক্ষক, এরা কেউ না কেউ তাতে সহায়তা করে। সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি নাজমুল হক বললেন, ধোপাজান থেকে বালু-পাথরবাহী নৌকা যাতে বের না হয় সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার মহোদয়। আমাদের অফিসার যারা মাঠে দায়িত্ব পালন করে তাদেরকে কঠিন নির্দেশনা দেওয়া আছে। সবজি ও মানুষের নৌকা ছাড়া একটা খালি নৌকাও যদি বের হয়, তাহলেও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন নির্দেশনা দেওয়া আছে।তিনি জানান, ওখানে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, কেবল থানার পুলিশ ডিউটি করে না, ডিবিও কাজ করে। তাদের ব্যাপারে কিছু পেলেও আমি তাদের ওসিকে সাথে সাথে জানাই। ডিবির ওসি আহমদ উল্লাহ ভূইয়া বললেন, ডিবি’র কেউ নদী থেকে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনকারীদের বের করতে সহযোগিতা করে না। যারা এসব বলেন, তারা সত্য বলে না। পুলিশ সুপার মহোদয়ের কড়া নির্দেশনা আছে, আমরা সেই নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করছি। আমাদের কেউ বেআইনী কিছু করলে, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান বললেন, ধোপাজান চলতি নদীতে অবৈধভাবে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধের জন্য নানা রকম প্রচষ্টা রয়েছে আমার। এখানে কোন রকমের অনিয়ম সহ্য করা হবে না। পুলিশের সঙ্গে স¤পৃক্ত কেউ অনৈতিক কিছু করলে, খবর পেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব আমি।প্রসঙ্গত, মধ্য আগস্টের দিকে প্রকাশ্যে দিনে দুপুরেই চলছিল ধোপাজান বালু-পাথর মহালে হরিলুট। বিনা বাধায় হাজারো নৌযানে উৎসবের আয়োজনে উত্তোলন বন্ধ এই বালু-পাথর মহালে লুটপাট চালায়। এই মহালকে ঘিরে নানা নামে চাঁদাবাজিও শুরু হয়েছিল। এসব ঠেকাতে নদীর মুখে পুলিশের সহযোগিতায় বাঁশের বেড়া দেয় জেলা প্রশাসন। বেড়া স্থাপনের কয়েকঘন্টা পরই উপড়ে ফেলে হয়, দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে চলে লুটপাট। নানা মহলে সমালোচনার পর লুটপাট রুখতে তৎপর হন বিজিবি পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। ২৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উদ্যোগে নদীতে দেয়া হয় বাল্কহেডের নৌ-ব্লক (ব্যারিকেড)। প্রবেশ মুখে চেক পোস্ট বসিয়ে ২৪ ঘন্টা মোতায়েন রাখা হয় পুলিশ ডিবি। পুলিশ প্রশাসনের কঠোরতায় পিনপতন নিরবতা ছিল ধোপাজান চলতি নদী। এখন আবার চুরি করে, কিংবা নানা কৌশলে বাল্কহেড বোঝাই করে বালু-পাথর বের করার চেষ্টা হচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2024 দৈনিক দেশ প্রতিদিন
Design & Development By HosterCube Ltd.