মোঃ ফারুক সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, ফেনী
ফেনীতে অপহরণের চারদিন পর স্কুল ব্যাগে পাওয়া গেল শিশুর লাশ। বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) অপহরণকারীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেওয়ানগঞ্জ রেল লাইনের পাশের ডোবা থেকে ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ আল মাইনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা যায়, গত সোমবার ফেনীর একাডেমী এলাকার আতিকুল আলম সড়ক থেকে প্রাইভেট পড়ে আর বাসায় ফেরেনি শিশুটি।
আহনাফের বাবা মাঈন উদ্দিন সোহাগ বাংলাদেশ রেড ক্রিস্টে ফেনী শাখায় কর্মরত। আহনাফ পরিবারের সঙ্গে ফেনী শহরেই বসবাস করতো। তাদের গ্রামের বাড়ি ফুলগাজী উপজেলার জয়পুরে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ টায় ফেনী জেলা পুলিশ কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মোঃ হাবিবুর রহমান এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের জানান, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামীরা হলেন, আশরাফ হোসেন তুষার (২০), মোঃ মোবারক হোসেন ওয়াসিম (২০) ও ওমর ফারুক রিফাত (২০)।
আসামীদের কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম আহনাফ আল মাঈন প্রঃ নাশিত (১০) কে গত ০৮ ডিসেম্বর ২৪খ্রিঃ রাত সাড়ে ৭ টায় সময় ১নং আসামী আশরাফ হোসেন তুষার (২০) ও ২নং আসামী মোঃ মোবারক হোসেন ওয়াসিম (২০) ভিকটিমের পূর্ব পরিচিত হওয়ায় সু-কৌশলে আসামীদ্বয় ভিকটিমকে আতিকুল আলম সড়ক হইতে সালাউদ্দিন মোড় সংলগ্ন রেললাইনে নিয়া আসে। ২নং আসামী মোঃ মোবারক হোসেন ওয়াসিম (২০) যোগাযোগ করিয়া ০৩নং আসামী ওমর ফারুক রিফাত (২০)কে ঘটনাস্থলে আনিলে সকল আসামীগণ ভিকটিমকে সালাউদ্দিন মোড় সংলগ্ন রেললাইনে নিয়া যায়। আসামীগণ ভিকটিমের ছবি এবং ভিডিও বাদীকে প্রেরণ করিয়া ১২(বার) লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। ১নং আসামী আশরাফ হোসেন তুষার (২০) এর নির্দেশনা মতে ২নং আসামী মোঃ মোবারক হোসেন ওয়াসিম (২০) জুসের সাথে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে পান করাইলে ভিকটিম ঘুমিয়ে পড়ে। ভিকটিম নিশাত এর ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর বাড়ীতে চলিয়া যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করিলে আসামীগণ রেললাইন সংলগ্ন ঝাউবনে নিয়া পরস্পর মিলিয়া ভিকটিমকে গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৪খ্রিঃ তারিখ দিবাগত রাত অনুমান ২ টার সময় শ্বাসরোধ করিয়া হত্যা করে। ভিকটিম যেহেতু আসামীদের পূর্ব পরিচিত ছিল, তাই আসামীগণ ভিকটিমকে ছেড়ে দিলে জানাজানি হবে ভেবে ভয়ে ভিকটিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
উক্ত হত্যার ঘটনা আড়াল করার জন্য আসামীগণ ভিকটিমের ব্যাগের ভিতর পাথর ভর্তি করিয়া সেটি ভিকটিমের কাধে চাপিয়ে ঝাউবন সংলগ্ন কুচুরিপানা ভর্তি ডোবায় লাশ ফেলে দেয়।
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪খ্রিঃ তারিখ দিনের বেলায় আসামীরা ডোবায় পার্শ্বে যাইয়া লাশ যথাযথ স্থানে আছে কিনা যাচাই করিতে যায়। আসামীরা ১০ ডিসেম্বর ২০২৪খ্রিঃ তারিখ ডোবা হইতে সিএনজি যোগে লাশ অন্যত্র নেওয়ার পরিকল্পনা করিলেও স্থানান্তর করিতে পারে নাই। ভিকটিমকে হত্যার করার পরও আসামীরা বাদীর নিকট পূর্বের মুক্তিপনের টাকা দাবি করিতে থাকে।
বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে অত্র মামলা রুজু হওয়ার ৮ ঘন্টার মধ্যে অত্র মামলার ঘটনার সহিত জড়িত আসামীগণ গ্রেফতার, ভিকটিমের মরদেহ উদ্ধার ও মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করিতে সক্ষম হয়।