স্টাফ রিপোটার,আলীকদম- বান্দরবান : আপনি কি ম্রো ভাষা জানেন? আচ্ছা ম্রো ভাষা না হয় না জানলেন, আমাদের দেশে যে ম্রো/মুরং নামে এক জাতিগোষ্ঠী বাস করে তা নিশ্চয়ই জানেন? কেমন হবে যদি তাদের মাতৃভাষা “ম্রো” তে আমাদের সাত বীরশ্রেষ্ঠের জীবনী লেখা হয়?
পার্বত্য চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলায় বসবাস করে ম্রো নৃগোষ্ঠী। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী হলেও বাংলা লিখতে তো পারেই না এমনকি পড়তেও পারে না অনেকে। কিন্তু তারা সবাই বীরশ্রেষ্ঠদের জীবন এবং মুক্তিযুদ্ধে তাদের বীরত্বের কাহিনী জানতে আগ্রহী। তাই “ইয়াংঙান ম্রো” তাদের মাতৃভাষা ম্রো-তে সাত বীরশ্রেষ্ঠ’র জীবনী লিখেছেন, ম্রো ভাষায় যে গ্রন্থের নাম “নমমো তসেন কিয়াক মি”। এ বইয়ের মাধ্যমে ম্রো-রা বীরশ্রেষ্ঠদের সম্পর্কে জানতে পারবে।
ইয়াংঙান ম্রো কে? নিরক্ষরতার অন্ধকারে থাকা ম্রোদের মাঝে গন্ধরাজ হয়ে সৌরভ ছড়াচ্ছেন ইয়াংঙান ম্রো। ম্রো জাতিগোষ্ঠীর মানুষ তাকে চেনে নিজেদের কন্ঠস্বর হিসেবে। পিছিয়ে পড়া এই নৃগোষ্ঠীর অনেক প্রথমের সাথে জড়িয়ে আছে ইয়াংঙানের নাম। ম্রো ভাষার প্রথম অভিধান লিখেছেন তিনি। লিখেছেন নিজ ভাষার প্রথম ব্যাকরণও। ম্রো ভাষায় লিখিত প্রথম বইটিও তার লেখা। গড়েছেন পাহাড় চূড়ায় পাঠাগারও। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে দুর্গম পাহাড়ে যে আলোর মশাল জ্বালিয়েছেন ইয়াংঙান, তা আজও জ্বলছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো, ম্রো ভাষায় লিখিত মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৭ শহীদ বীরশ্রেষ্ঠের জীবনী।
ইয়াংঙান হাইস্কুলে পড়ার সময় বীরশ্রেষ্ঠদের বীরত্ব শুনিয়েছিলেন নিতা রঞ্জন দাস। ম্রো আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক তিনি। বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনী নিয়ে লেখা বই এর মোড়ক উন্মোচনও করেছেন সেই নিতা রঞ্জন দাস।
কেনো ইয়াংঙান ম্রো এই বইটি লিখেছেন? কাহিনী শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৪ই ডিসেম্বর। থানচিতে ম্রো ভাষার এক বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের বার্ষিক সভা। সেখানে ইয়াংঙানের সাথে পরিচয় হয় চাদুই ম্রো-র। দুদিন পর ১৬ই ডিসেম্বর, তখন ছাত্রছাত্রীদের সাথে বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে আলোচনা করতে হবে সেজন্য আগে থেকে একটি বই পড়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন চাদুই ম্রো সেখানে এসে বসে এবং কিছুক্ষণ পর বইটি পড়ার চেষ্টা করে কিন্তু লেখা গুলো বাংলায় হওয়ায় পড়তে পারে না; সেসময় চাদুই ম্রো আফসোস করে বলেন ” আহা বইটি যদি ম্রো ভাষায় লেখা থাকতো তাহলে আমিও বাংলার বীরশ্রেষ্ঠদের সম্পর্কে জানতে পারতাম”। তখন থেকেই ইয়াংঙান ম্রো সিদ্ধান্ত নেন তিনি ম্রো ভাষায় বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনী লিখবেন এবং ৮ বছর পর সেই সিদ্ধান্তের ফল বাস্তবায়ন করেন।
নিজ ভাষায় লেখা বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনীর এই বই পেয়ে ম্রো সম্প্রদায় খুশি হয়েছে। এখন তারা বীরশ্রেষ্ঠদের কথা শুধু গল্পে শুনবে না, নিজেরাও পড়তে পারবে নিজেদের ভাষায়। গ্রন্থ বীরশ্রেষ্ঠদের_জীবনী #ম্রো_ভাষায়_বীরশ্রেষ্ঠ #ইয়াংঙান_ম্রো #ম্রো_ভাষার_গ্রন্থ